নিজস্ব প্রতিবেদক :
এখলাছুর রহমান ::::
বাংলাদেশের ইতিহাসে জুলাই ২০২৪ এক অবিস্মরণীয় মাস হিসেবে লিপিবদ্ধ থাকবে। এই মাসেই শেখ হাসিনার প্রায় ১৬ বছরের স্বৈরশাষনের বিরুদ্ধে গর্জে উঠে ছাত্র জনতা। শুরুতে সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কার চেয়ে এই আন্দোলন শুরু হলেও পরে তা আর শুধু কোটা আন্দোলনে মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকেনি। ছাত্রছাত্রীদের নিয়ে শেখ হাসিনার কটুক্তি, তাদেরকে রাজাকার তকমা দেয়া এবং কোটা আন্দোলন দমনে হেলমেটধারী ছাত্রলীগকে লেলিয়ে দেয়ায় পর এই আন্দোলন অন্যদিকে মোড় নেয় যা শেষ পযর্ন্ত শেখ হাসিনার পতন ডেকে আনে।
উপায়ন্তর না দেখে ফ্যাসিস্ট হাসিনা তার পুরনো কৌশলের আশ্রয় নেয়। পুলিশকে দিয়ে যেভাবে গত ১৬ বছর বিরুধী দল এবং ভিন্ন মতকে নিশ্চিহ্ন করার চেষ্টা করেছিল, শত শত মামলা দিয়ে বিরুধী মতের হাজার হাজার নেতাকর্মীদের জেলে নিক্ষেপ করেছিল, রাস্তায় যেভাবে প্রকাশ্যে গুলি, টিয়ারগ্যাস এবং লাঠিপেটা করে বিরুধী দলকে গনতান্ত্রিক আন্দোলন থেকে বিরত রেখেছিল ঠিক একই কায়দায় স্বৈরশাসক হাসিনা ছাত্রজনতার এই যৌক্তিক আন্দোলনকে ও দমাতে চেয়েছিল। সারা দেশে কারফিউ জারি করা এবং দেখা মাত্র গুলির নির্দেশ দিয়েছিল খুনি হাসিনা। ফ্যাসিস্ট হাসিনার আজ্ঞাবহ পুলিশ তার এই নির্দেশ পালন করতে কোন কুন্ঠাবোধ করেনি। ছাত্রজনতার আন্দোলনে পুলিশ শুধু লাঠিপেটা আর সাউন্ড গ্রেনেড নিক্ষেপ করেই ক্ষান্ত হয়নি, বরং সরাসরি গুলি চালিয়ে প্রায় ২০০০ মানুষকে হত্যা এবং প্রায় ৩০০০০ হাজার মানুষকে আহত করে হাসিনার পালিত ক্যাডার এই পুলিশ বাহিনী।
জনগণের ট্যাক্সের টাকা থেকে যেই পুলিশের বেতন ভাতা দেয়া হয় সেই জনগণের উপর নির্বিচারে গুলি চালাতে পুলিশের একটু ও হাত কাঁপেনি। অনেক জায়গায় পুলিশ আন্দোলনরত মানুষকে শুধু হত্যা করেই ক্ষান্ত হয়নি বরং আহত মানুষের গায়ে আগুন দিয়ে লাশ পুড়িয়ে দেয়ার মত বিভৎস গঠনা ও ঘটিয়েছে যা একটি সভ্য সমাজে কল্পনা ও করা যায়না।
হাসিনার সরকারের সময় নিয়োগ পাওয়া পুলিশ নামের এই ছাত্রলীগ ক্যাডাররা খুনি হাসিনার প্রতি অন্ধ আনুগত্য, পদ পদবী এবং প্রমোশনের লোভে এমন কোন ঘৃনিত কাজ নেই যা তাদের দ্বারা সংগঠিত হয়নি।
পুলিশের বর্বরতা, হত্যা, গুম, খুন এবং মামলাবাজির কারনে কত পরিবার যে নিশ্চিহ্ন হয়ে গেছে তা ধীরেধীরে প্রকাশ পাচ্ছে এখন। আর গত ১৬ বছরে ফ্যাসিস্ট হাসিনার দোসর হয়ে তার অবৈধ ক্ষমতা কুক্ষিগত করতে সাহায্য করার কারনে পুলিশ এখন জনগণের চোখে ঘৃনার পাত্রে পরিনত হয়েছে। জনতার রোষানলে পরা পুলিশ এখন রাস্তায় টহল দিতে ভয় পায়। হাসিনা আমলের দোর্দন্ড প্রতাপশালী পুলিশের এমন করুণ পরিনতি হবে সেটা হয়ত তারা কখনোই কল্পনা করতে পারেনি। নিজের প্রাণ বাঁচাতে তাদেরকে আত্নগোপন অথবা দেশ ছেড়ে পালাতে হবে সেটা তারা ঘুনাক্ষরে ও চিন্তা করেনি। মিডিয়ার কল্যানে জানা যাচ্ছে যে, এখনো শতশত পুলিশ পলাতক অবস্থায় আছেন, তাদের সঠিক সংখ্যা হয়ত কোনদিন ও জানা যাবেনা। তবে আমরা চাই পুলিশের মধ্যে যারা গত ১৬ বছরে বিভিন্ন অপরাধ করেছে তাদেরকে গ্রেফতার করে অবশ্যই বিচারের সম্মুখীন করতে হবে। পুলিশ নামের এই ক্রিমিনালদের বিচার করতে না পারলে গত ১৬ বছর যারা বিভিন্ন ভাবে পুলিশের হাতে নির্যাতিত হয়েছেন, যারা গুম হয়েছেন এবং জুলাই আন্দোলনের শহীদের রক্তের সাথে বেইমানী করা হবে।