নিজস্ব প্রতিনিধি: সিলেটের ওসমানীনগরে অবৈধ সন্তান জন্মের ঘটনায় বাড়িতে হামলা হয়েছে। জ্বালিয়ে দেয়া হয়েছে নবজাতক সন্তানের মায়ের বাড়ি-ঘর। হামলায় আহত হয়েছেন নবজাতক সস্তানের নানী। তাকে ভর্তি করা হয়েছে হাসপাতালে।
এ ঘটনায় এখানকার পরিস্থিতি উত্তাল রয়েছে। ঘটনাটি ঘটে গতকাল থানার দয়ামীর গ্রামে।
এ ঘটনা হৃদয়বিদারক ও পুরো এলাকাকে নাড়িয়ে দিয়েছে।
যেখানে বিবাহবহির্ভূত সম্পর্কের মাধ্যমে এক সন্তানের জন্ম এবং জন্ম নেওয়া এ সন্তানের কারণে একটি পরিবারকে চরম সামাজিক ও শারীরিক নিপীড়নের মুখে পড়তে হয়েছে।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, সুবেনা বেগম নামের এক তরুণী, যিনি যুক্তরাজ্যে অবস্থান করছেন। ২০২৩ সালে এমদাদুল নামের এক ব্যক্তিকে বিয়ে করে তিনি ইউকে’তে যান।
ইউকেতে যাবার পর থেকে স্বামীর সঙ্গে বিভিন্ন বিষয় নিয়ে মতপার্থক্যে দেখা দেয় তখন সম্পর্কের টানাপোড়েন সৃষ্টি হয়। মানসিক অস্থিরতার কারণে তারা এক পর্যায়ে আলাদা থাকতে শুরু করেন।
এই অবস্থায় সুবেনার পরিচয় ঘটে ইউকেতে অবস্থানরত আব্দুল আলীম নামক এক ব্যক্তির সঙ্গে। যার সঙ্গে পরিচয় থেকে গড়ে ওঠে ঘনিষ্ঠ প্রেমের সম্পর্ক। পরবর্তীতে তারা বিবাহ বহির্ভূত দৈহিক সম্পর্কেও জড়িয়ে পড়েন।
এক পর্যায়ে সুবেনা অন্তঃসত্ত্বা হয়ে পড়েন এবং সম্প্রতি একটি কন্যা সন্তানের জন্ম দেন। সন্তান জন্মের পর ঘটনাটি জানাজানি হয়। এর পর থেকেই সুবেনা ও তার নবজাতক শিশুকে ঘিরে শুরু হয় নানা রকম সামাজিক এবং পারিবারিক হুমকি-ধামকি।
তার স্বামী এমদাদুল ও তার পরিবারের পক্ষ থেকে তাকে চাপ ও হুমকি দেওয়া হয়। সুবেনার পরিবারও বিষয়টি মেনে নিতে পারেননি, তারাও হুমকি দিতে থাকেন। সুবেনার মা, মামা এবং চাচারা তাকে “পরিবারের সম্মানহানির” অভিযোগে হত্যার হুমকি দিতে থাকেন।
এ ঘটনাটি ছড়িয়ে পড়ে ওসমানী নগরের দয়ামীর গ্রামে। ঘটনাটি চাউড় হলে স্থানীয় মসজিদের এক ইমামের নেতৃত্বে কিছু প্রভাবশালী লোকজন এবং এলাকার তথাকথিত ‘তৌহিদি জনতা সুবেনার পৈত্রিক বাড়িতে গিয়ে গতকাল হামলা চালায়। বিক্ষুব্ধ জনতা আগুন লাগিয়ে বাড়ি পুড়িয়ে দেয় বলে অভিযোগ উঠেছে। এই ঘটনায় সুবেনার মা গুরুতরভাবে আহত হন এবং তাকে তাৎক্ষণিকভাবে স্থানীয় হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
এ ঘটনায় এলাকায় চাঞ্চল্য বিরাজ করছে। এখন পর্যন্ত কোনো মামলা হয়েছে কিনা, বা আইনশৃঙ্খলা বাহিনি অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে কী ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে, সে বিষয়ে নিশ্চিত হওয়া যায়নি। এ বিষয়ে ওসমানীনগর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা বলেন, এই ব্যাপারে কোন অভিযোগ দায়ের হয়নি। অভিযোগ পেলে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
তবে এমন ঘটনায় মানবাধিকারকর্মীরা উদ্বেগ উৎকন্ঠা প্রকাশ করেছেন।
নারী নিরাপত্তা, পারিবারিক সহিংসতা, এবং ধর্মীয় উস্কানির অপব্যবহার নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেন মানবাধিকার সংগঠনের নেতৃবৃন্দ।
স্থানীয় এক মানবাধিকার সংগঠনের প্রতিনিধির ভাষ্য অনুযায়ী, “ব্যক্তিগত সম্পর্কের জটিলতা কখনোই কারও বিচার করার বা সহিংসতার মাধ্যমে প্রতিশোধ নেওয়ার লাইসেন্স হতে পারে না। এই ঘটনায় যারা প্রত্যক্ষভাবে জড়িত, তাদের বিরুদ্ধে যথাযথ আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া উচিত।”
দয়ামীরের কিছু প্রভাশালী ব্যক্তিদের কাছে এই ব্যাপারে জানতে চাইলে তারা কোন মন্তব্য করতে পারবেন না বলে জানান।
সুবেনা বেগম ও তার সন্তানের নিরাপত্তা এখন বড় প্রশ্ন হয়ে দাঁড়িয়েছে। দেশের আইন ও মানবাধিকারের দৃষ্টিতে এই ঘটনার দ্রুত তদন্ত এবং অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ নেওয়ার দাবি জানিয়েছেন সচেতন নাগরিক সমাজ।